শামীম ইকবাল চৌধুরী,নাইক্ষ্যংছড়ি
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীতে মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে বৌদ্ধ ভিক্ষুর হত্যার ঘটনার পর এবার মারমা সম্প্রদায়ের এক লোককে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।
বৃহস্পতিবার রাত ১০ টায় বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন উত্তর পার্শ্বে আনুমানিক একশত গজ দুরত্বে বাইশারী- ধামনখালী-লম্বাবিল সড়কের চিতাখোলা নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। বাইশারী বাজার থকে সাতশত গজ উত্তরে নিজ মারমা পাড়া থেকে পাঁচশত গজ দক্ষিনে পাকা সড়কের উপর এই ঘটনায় জনমনে আতংকের সৃষ্টি হয়েছে। নিহত ব্যক্তি বাইশারী ইউনিয়নের ধাবনখালী মারমা পাড়ার বাসিন্দা মৃত আগ্য প্রু মার্মার পুত্র মংশৈহ্লু মার্মা (৫৫)। সে বাইশারী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড সহ সভাপতি বলে আওয়ামীলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাহাদুর জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারাবীর নামাজ শেষে রাত ১০ টার দিকে উক্ত সড়ক দিয়ে মুসল্লীরা বাড়ী ফেরার পথে নিহত মংশৈহ্লু মার্মার লাশ রক্তাক্ত অবস্থায় সড়কের উপর পড়ে থাকতে দেখে ঘটনাটি পুলিশকে জানায়। পুলিশ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছান। বাইশারী তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আনিসুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। ঐ সময় দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছান বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুল হক, নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মোঃ আলম, বাইশারী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাহাদুর সহ এলাকার শত শত জনতা।
এছাড়া রাত ১ টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু শাফায়েত মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম, নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল খায়ের, সেকেন্ড অফিসার সুলতান আহসান, আওয়ামীলীগ নেতা তছলিম ইকবাল চৌধুরী প্রমুখ।
১ জুলাই নিহতের বড় ছেলে উছাথোয়াই মারমা বাদী হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। উল্লেখ্য, গত ১৩ মে নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়নের উপর চাক পাড়া বৌদ্ধ বিহারের বৌদ্ধ ভিক্ষু মংশৈউ চাককে একই কায়দায় গলা কেটে হত্যা করা হয়। দেড় মাসের ব্যবধানে পূনরায় বৌদ্ধ ধর্মীয় মারমা সম্প্রদায়ের এক লোককে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় পাহাড়ী-বাঙ্গালী সকলেই আতংক অবস্থায় রয়েছে। এ পর্যন্ত উক্ত ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারে নাই। তবে নিহতের বড় ভাই উথোয়াইলা মারমা কান্নারত অবস্থায় স্থানীয় লোকজনের মাঝে বলেন, আমার ভাইকে শত্রুতা মূলক জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে বিকাল ৩টার সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। ঐ সময় তিনি মার্মা সম্প্রদায়ের পাড়ায় গিয়ে শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং হত্যাকারীদের অবশ্যই গ্রেপ্তার পূর্বক বিচারের মোখামুখি করা হবে বলে আশস্ত করেন।
অপরদিকে বিকাল ৫ টার সময় স্থানীয় উপজাতীয় নেতৃবৃন্দরা নবনির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: আলম, আওয়ামীলীগের সদস্য সচীব মংথোয়াইলা মার্মার নেতৃত্বে এক বিশাল র্যালী বের করে বাইশারী বাজার হয়ে পোষ্ট অফিস চত্বরে মানব বন্ধনের আয়োজন করে। উক্ত মানব বন্ধনের নেতৃবৃন্দরা হত্যাকারীর অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবী জানান।
এদিকে ময়না তদন্ত শেষে বিকাল ৫:৩০ মিনিটের সময় মৃত মংশৈহ্লু মার্মার অন্তোষ্টিক্রিয়া স্থানীয় স্বশানে সম্পন্ন করা হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল খায়ের সাংবাদিকদের জানান, অবশ্যই অপরাধীদের খুজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে পুলিশের তদন্ত টিম অপরাধীদের ধরার জন্য সাড়াশী অভিযানে নেমেছে।
স
পাঠকের মতামত